আজ- সোমবার, ১৭ই মার্চ, ২০২৫ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১     

 আজ -সোমবার, ১৭ই মার্চ, ২০২৫  | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ | ১৬ই রমজান, ১৪৪৬                                                   রাত ২:১৮ - মিনিট |

 

Homeমতামতবাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্ব এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান

বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্ব এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান

একবিংশ শতাব্দীতে অবশ্য সম্পর্কের মাত্রা খানিকটা ভিন্নরূপ নিয়েছে। ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের পাশাপাশি চীন এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার ও উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের বেশির ভাগ বড় প্রকল্পে অর্থায়নের বড় উৎস চীন, চীনা ঠিকাদাররাই কাজ করছেন বেশির ভাগ প্রকল্পে। এর সবটাই যে আশীর্বাদ, তা অবশ্য নয়। চীনা কোম্পানিগুলো প্রায়ই প্রকল্প দীর্ঘায়িত করে ব্যয় বৃদ্ধি ঘটায়। এক প্রকল্পের কাজ আটকে রেখে আরেক প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নেওয়ার উদাহরণ আছে। অভিযোগ আছে, চীন সরকার এ ধরনের ক্ষেত্রে চীনা কোম্পানিগুলোকে সহায়তা দেয়। চীনা অর্থায়নও আসে বাণিজ্যিক সুদে, জাপান বা ইউরোপের মতো স্বল্প সুদে নয়। প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগও শোনা যায়। সবকিছুর পরও অবশ্য চীনের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা বাহুল্য, অবকাঠামো উন্নয়নে যে বিপুল অর্থায়নের প্রয়োজন, তা শুধু চীনের তহবিলেই আছে, আর কোথাও নেই।

সাম্প্রতিক কালে দুটি বিষয় দুই দেশের সম্পর্কে পারস্পরিক বিশ্বাসের বাতাবরণ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্রথমটি ছিল সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি সই করা থেকে শেষ পর্যায়ে ভারতের চাপে সরে আসা। অপরটি হচ্ছে মিয়ানমার সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকটে ভুক্তভোগী বাংলাদেশের পরিবর্তে গণহত্যাকারী মিয়ানমার জান্তাকে চীন কর্তৃক সর্বাত্মক সমর্থন প্রদান। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে যে মুষ্টিমেয় সংখ্যক দেশ মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, চীন সর্বদাই থেকেছে তাদের মধ্যে।

মিয়ানমার সামরিক জান্তা তাদের টিকে থাকার জন্য এখন অনেক বেশি চীননির্ভর। চীনের সামনে সুযোগ আছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই পক্ষের মাঝে একটা সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করার এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ দেওয়ার, যাতে জাতিগত নিধনের শিকার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যথাশিগগির নিজ বাসভূমে ফেরত যেতে পারে।

গণচীনের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হলো কয়েক দিন আগে। ‘বাংলাদেশ–চায়না সিল্ক রোড ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন এ উপলক্ষে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে, যাতে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন বিশেষ অতিথি। চীনা রাষ্ট্রদূত সেখানে বলেন, স্বাধীনতার ৭০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নত দেশে পরিণত হওয়া এবং চীনের দ্বিতীয় শতকে যাত্রার প্রাক্কালে দুই দেশের সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে (প্রথম আলো, ১ অক্টোবর ২০২১)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। গুরুত্বপূর্ণ ও খ্যাতিমান অন্য যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা হচ্ছেন রাশেদ খান মেনন, দিলীপ বড়ুয়া, হাসানুল হক ইনু, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আবদুল মঈন খান প্রমুখ।

পত্রিকায় তাঁদের বক্তব্য যা ছাপা হয়েছে, তাতে দেখলাম না যে তাঁদের কেউ রোহিঙ্গা সংকট, যা বাংলাদেশের সবচেয়ে জটিল সমস্যা এবং যা থেকে বেরোতে চীনের সহায়তা প্রয়োজন, তা নিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ করেছেন। ওয়েবিনারটি সর্বতোভাবেই দুই দেশের গভীর সম্পর্ক ও অংশীদারত্ব নিয়ে, যা চীনা রাষ্ট্রদূতের কথায়ও উঠে এসেছে। এই অংশীদারত্ব এগিয়ে নিতে সবচেয়ে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সক্রিয় ভূমিকা। বাম ঘরানার এই মানুষগুলোর সামনে সুযোগ ছিল মার্জিত ও সংযত ভাষায় চীনকে একটি মেসেজ দেওয়া, বাংলাদেশের মানুষ চায় চীন এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুক। তা না করে তাঁরা সবাই শুধু চীনের প্রশংসা করেই তাঁদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন।

একই দিনে ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল: আঞ্চলিক শান্তি, পরিবেশ ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব’ শীর্ষক আরেকটি ওয়েবিনার আয়োজন করে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ ও ‘দ্য এশিয়ান এনজিও কোয়ালিশন ফর এগ্রারিয়ান রিফর্ম অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তাবিষয়ক এত প্রতিষ্ঠান থাকতে ভূমি সংস্কারসংক্রান্ত দুটি প্রতিষ্ঠান কেন রোহিঙ্গা সমস্যায় জড়িত হলো, তা আমার বোধগম্য হলো না। যা-ই হোক, ওয়েবিনারে পঠিত মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান অনেকটা চীন, জাপান ও ভারত—এ তিন দেশের ওপর নির্ভর করে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এ তিন দেশ একজোট হয়ে চাইলে অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব। চীন যদি সত্যিই চায়, তবে একার প্রচেষ্টায়ই সে এ সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে, বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এক সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চিকে সরিয়ে দিয়ে সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এর আগে প্রকৃত ক্ষমতা যদিও সেনাদের হাতেই ছিল, তবু সামনে একটা অসামরিক পর্দা ছিল, যার প্রধান ছিলেন অং সান সু চি। তখন যদি চীন বেশি চাপ দিত, একটা সুদূর সম্ভাবনা ছিল যে মিয়ানমার জান্তা চীনের পাশাপাশি ভারসাম্য সৃষ্টির জন্য পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে যোগ দিতে পারত। বর্তমান পরিস্থিতিতে সে সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। সামরিক জান্তা তাদের টিকে থাকার জন্য এখন অনেক বেশি চীননির্ভর। চীনের সামনে সুযোগ আছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই পক্ষের মাঝে একটা সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করার এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ দেওয়ার, যাতে জাতিগত নিধনের শিকার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যথাশিগগির নিজ বাসভূমে ফেরত যেতে পারে। এরূপ একটি পদক্ষেপ বন্ধু বাংলাদেশকে নির্ভার করার পাশাপাশি রাখাইনে স্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে অবদান রাখবে এবং চীনা বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে, তা চলমান ভূরাজনৈতিক খেলায় বাংলাদেশের মানুষকে আরও বেশি চীনঘনিষ্ঠ করে তুলতে সহায়ক হবে। চীন কি গ্রহণ করবে এ সুযোগ?

রিলেটেড আর্টিকেল

2 COMMENTS

  1. Flaunch is the leading blockchain gaming launchpad, designed to help game developers and investors thrive in the Web3 gaming ecosystem. By offering secure token launches, NFT integrations, and decentralized crowdfunding, Flaunch enables game creators to fund, develop, and scale their projects with full transparency and community-driven support. Whether you’re a developer or an investor, Flaunch provides the tools to connect and grow in the blockchain gaming space. https://flaunch.tech

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ

রিসেন্ট কমেন্টস