নারায়ণগঞ্জে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১০৩ মাস উপলক্ষে খুনিদের বিচারের দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মসূচিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক, নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুদিন আগে বললেন বিচারের বাণী যেন আর নীরবে–নিভৃতে না কাঁদে। অথচ সাড়ে আট বছর ধরে ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। একবার তিনি বললেন, শিশু হত্যাকারীরা ঘৃণ্য জীব। আবার তিনি ত্বকীর ঘাতকদের পুরস্কৃত করলেন। এসব কি রাজনীতির কথা, নাকি কেবলই কথার কথা। আমরা একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেবল কথার কথা শুনতে চাই না।’
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘দেশে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হলে একটি হত্যার বিচারের অভিযোগ তৈরি হয়েও তা সাড়ে আট বছর আটকে থাকত না। ত্বকীর ঘাতকেরা যেহেতু সরকারদলীয়, সেহেতু ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা এ বৈষম্যমূলক, গণবিরোধী বিচারব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। আমরা সংবিধানে উল্লেখিত জনগণের অধিকারগুলোর বাস্তবায়ন চাই। স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার, মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার চাই। স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ফিরে পেতে চাই।’
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক, সামাজিক সংগঠন সমমনার সভাপতি দুলাল সাহা, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মণি সুপান্থ, সামাজিক সংগঠন বাতায়নের সংগঠক মাইনুদ্দিন মানিক, সিপিবি শহর সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকার প্রমুখ।
ভবানী শংকর রায় বলেন, ‘২০১৩ সালের ৬ মার্চ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে হত্যা করে ঘাতকেরা লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। এর দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে আমরা ত্বকীর লাশ উদ্ধার করি। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বিচারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে আমরা আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছি। সরকারের বৈষম্যমূলক বিচারব্যবস্থার কারণে এই দীর্ঘ সময়েও এ হত্যার বিচার হয়নি।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। এরপর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
991