এভাবেই সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘খুব বেশি নিজের কাজ নিয়ে আলোচনা বা প্রচার সাদের পছন্দ নয়। কাজ নিয়ে অন্যরা যেন আলোচনা করেন, এমনটাই পরিচালকের আগ্রহ ও পছন্দ। এ জন্যই কাস্ট করা থেকে শুরু করে কান উৎসবে যাওয়ার আগপর্যন্ত সবকিছু গোপন রাখা হয়েছিল। আমার চরিত্র কেমন ছিল, এটাও বলার পারমিশন ছিল না। এমনকি আমাদের সিনেমাটি নিয়ে কোনো কিছু বলারও পারমিশন ছিল না। পরিচালকের মনে হয়েছিল, সিনেমাটি যখন কিছু অর্জন করবে, তখন বলবেন। পরিচালক আমাকে বিশ্বাস করেছিল, আমি বিশ্বাস রক্ষা করে কাউকে কিছু বলিনি।’
কান উৎসব নিয়ে যখন কথা হবে, তখন অবধারিতভাবে উৎসবে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা শোনার লোভ কেউ সামলাতে পারবেন না। পূর্ণিমাও পারেননি। ‘এত বড় স্বপ্ন দেখার সাহসও আমার ছিল না। আমি মনে করি, কানে যাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। আশাও করিনি কখনো। আমাকে কানে নিয়ে যাওয়ার পুরো কৃতিত্ব আমার পরিচালকের’—বলছিলেন বাঁধন। তিনি বলেন, ‘কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার পর আমি যে পরিমাণ সম্মান পেয়েছি, সেটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। একজন অভিনেত্রী হিসেবে কানে আমাকে যে পরিমাণ সম্মান দেওয়া হয়েছে, সেটা আমি সারা জীবন মনে রাখব। আমরা সবকিছু উপভোগ করেছি উৎসবে। এ জন্যই আমার মনে হয়েছে, উৎসবটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে।’
কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাঁধন জামদানি শাড়ি, মসলিনের পোশাক পরে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। পোশাক নিয়ে কী রকম প্রস্তুতি ছিল? পূর্ণিমার এমন প্রশ্নের উত্তরে বাঁধন বলেন, ‘কোনো প্রস্তুতিই ছিল না।’ এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানান, ‘করোনার কারণে উৎসবে যাওয়া হবে কি না, সেটা কিন্তু আগে থেকে বলার সুযোগ ছিল না। যেদিন আমরা পাসপোর্ট হাতে পাই, তার পরের দিন ভোররাত চারটায় আমাদের ফ্লাইট ছিল। আমি যাদের কাছ থেকে পোশাক নিয়েছি, তারা কিন্তু একটা অনিশ্চয়তার মধ্য থেকে পোশাকগুলো তৈরি করেছে। তারা জানত না, আমি সত্যি সত্যিই যেতে পারছি কি না। শেষ সময় পর্যন্ত না যাওয়ার চান্সও ছিল। যাওয়ার আগে আগে তাড়াহুড়ার মধ্যে সব তৈরি করতে হয়েছে। আমি উৎসবে জামদানি পরব, সেটা মনে মনে আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম।’
ডেন্টিস্ট বাঁধন যখন সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উঠে এলেন, তখন তাঁর অভিনয় নিয়ে তেমন কিছু শোনা যায়নি। কিন্তু সেই বাঁধনই ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে অন্য ধাপে নিয়ে গেলেন। নিজেকে কীভাবে বদলে ফেললেন? পূর্ণিমার এমন কঠিন প্রশ্নের উত্তরে বাঁধন বলেন, ‘আমাকে রেহানা মরিয়ম নূর বানানোর পুরো কৃতিত্ব পরিচালক সাদের। এটা আমি সব সময় বলে আসছি এবং আমৃত্যু এ কথা বলে যাব। আর আমি যেটা করেছি, সেটা হলো আমি পরিচালককে বিশ্বাস করেছি এবং প্রচণ্ড রকম পরিশ্রম করেছি।’
‘একই সঙ্গে এ কথাও বলব, সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে আসা বাঁধন আসলে আগে কখনোই অভিনয়টাকে সিরিয়াসলি নেয়নি। কিন্তু পারিবারিক ঝামেলার কারণে আমার চিন্তার একটি পরিবর্তন আসে। এরপর আমার ভাবনায় বদল আসে। আমি যে কাজ করছি, সেটা ভালোবেসে করতে চাই এবং কিছু কাজ করে যেতে চাই, যে কাজের জন্য মানুষ আমাকে মনে রাখবেন,’ বলেন তিনি।
‘রেহানা মরিয়ম নূর’–এর প্রিমিয়ারের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন আজমেরী হক বাঁধন। তখন কেউ একজন বাঁধনকে কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলেন। সেই মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে, ‘যিনি থামানোর চেষ্টা করেছিলেন, তিনিও খুব কান্না করছিলেন। আসলে সিনেমাটি দেখে আনন্দ পাওয়ার মতো সিনেমা না। সিনেমাটি আসলেই কষ্টের সিনেমা। উৎসবের দর্শকেরা খুব ভালো ছিল। ওখানকার দর্শকেরা মানুষ ও সিনেমাকে সম্মান দিতে জানে। কেউ কোনো শব্দ পর্যন্ত করে না। প্রিমিয়ারের মধ্যেই আমি আমার কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম এবং অন্য মানুষের ফোঁপানোর শব্দ। প্রিমিয়ার শেষে ওই মহিলার সামনে দিয়ে যাওয়ার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে ফেলেন এবং আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করতে থাকেন। বিষয়টা আমার মনে হয়েছে কান উৎসবের সেরা মুহূর্ত।’
উপস্থাপক পূর্ণিমা এবার ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ থেকে চলে আসেন মুসকান জুবেরীর কাছে। প্রসঙ্গ এবার ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’। ওয়েব সিরিজটিতে অভিনয় করে দুই বাংলা থেকে দারুণ প্রশংসা পেয়েছেন আজমেরী হক বাঁধন। অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, খুবই ভালো লেগেছে। তবে শুটিংয়ের সময় আমি খুব ভয়ে ছিলাম। সব বড় অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করা নিয়ে টেনশনে ছিলাম। আমার একটা ভুলের কারণে পুরো শুটিং বারোটা বেজে যেতে পারে। আর পরিচালক সৃজিত মুখার্জি আমাকে অনেক ফাইট করে সিনেমাটিতে নিয়েছিল। আমি ভুল করলে পরিচালকেরও বদনাম। আমি পরিচালকের সম্মান রাখতে পেয়েছি, ভারতের অভিনেতাদের সামনে দেশের সম্মানও নষ্ট হতে দিইনি।’
our
Новый сериал
2084
сахиэль ангел хранитель
site