আজ- সোমবার, ৮ই জুলাই, ২০২৪ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১     

 আজ -সোমবার, ৮ই জুলাই, ২০২৪  | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ | ১লা মহর্‌রম, ১৪৪৬                                                   সন্ধ্যা ৭:৪৯ - মিনিট |

 

Homeকৃষিবার্তামাসে ৭০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি

মাসে ৭০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সমুন ও শফিকুল দুই বন্ধু। পেশায় একজন ঠিকাদার, অন্যজন ব্যবসায়ী। তাদের স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার। কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে, তা হয়ে উঠছিল না।

তবে তাদের স্বপ্ন পূরণে আর্শিবাদ হয়ে এসেছে করোনা। করোনার কর্মহীন সময়ে ঠিকাদার সুমন ভাবতে থাকেন, কি করা যায়। তখন তিনি ড্রাগন চাষ নিয়ে পরিকল্পনা করেন। পরে ইউটিউবে ড্রাগন চাষের কলাকৌশল রপ্ত করেন তিনি। সে সঙ্গে তিনি দেখতে পেলেন, ড্রাগন চাষে অনেকেই সফল হয়েছেন। এ থেকে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে ড্রাগন চাষ করতে মনস্থির করেন। পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী বন্ধু শফিকুলের সঙ্গে আলোচনা করেন।

এরপরে দুইজন মিলে সিদ্ধান্ত নেন ড্রাগন চাষ করার। যেমন কথা তেমন কাজ। তারা সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা খেয়া ঘাট গ্রামে তিন একর জায়গা ভাড়া নেন। সেখানে তারা ছয় হাজার ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করেন। নিয়মিত শ্রম ও পরিচর্যার ফলে চারা রোপণের ছয় মাস পরেই ফল আসতে শুরু করে। এ যেন স্বপ্ন জয়ের নতুন দিগন্তের সূচনা। এ বাগান থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের আয় হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। যা আগামীতে বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

বিশাল বাগানটি ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি ইটের পিলার দিয়ে সোজা করে প্রতিটি ড্রাগন গাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রতিটি গাছেই ঝুলছে লাল বর্ণের ড্রাগন ফল। পুরো বাগান জুড়ে যেন লালের সমাহার। ফলগুলো যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য প্রতিটি ফলে পরিবেশ বান্ধব পলিথিন মোড়ানো হয়েছে। পাঁচজন শ্রমিক নিয়মিত বাগান পরিচর্যা করছেন।

কথা হয়, ড্রাগন চাষি সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঠিকাদারি কাজ করার সুবাদে চট্টগ্রামের হালদা বিলি ড্রাগন বাগানে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিলাম। এরপর থেকে একটা স্বপ্ন ছিল ড্রাগন বাগান করার। দেখলাম, ব্যবসাটি লাভজনক। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসি। এরপর গ্রামের বাড়িতে এক বন্ধুকে নিয়ে পরিকল্পনা করি। জায়গা ভাড়া নিয়ে ছয় হাজার ড্রাগন চারা রোপণ করি। সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। নিয়মিত শ্রমিক দিয়ে পরিচর্যা করাই। প্রতিদিন পাঁচজন শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে আমার প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকার খরচ হচ্ছে। রোপণের ছয় মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। এখন প্রতি মাসে বিক্রি করছি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ফল। আশা করছি, এক বছরের মধ্যেই খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখব।

তিনি আরো বলেন, এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফল ধরে। একটি গাছ থেকে প্রতি মাসে ২০/২৫ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। এ ছাড়া শীতকালে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রাতে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে বারো মাস ফল পাওয়া যাবে। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি বার বার ঋণ সহায়তার বিষয়ে কৃষি ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। কৃষি ঋণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে ড্রাগন চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

অপর বন্ধু বাগান মালিক শফিকুল বলেন, আমাদের বাগান থেকে ক্রেতারা ড্রাগন ফল নিয়মিত কিনতে আসছেন। আকার ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় ড্রাগন ফল ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ দিকে স্থানীয় লোকজন বলেন, আমাদের গ্রামে প্রথম ড্রাগন বাগান হয়েছে। এতে করে গ্রামের সৌন্দর্য ও সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এখান থেকে তরতাজা ড্রাগন ফল কিনে থাকি। যারা ড্রাগন বাগান করেছেন, তাদের দেখে গ্রামের অন্য বেকার যুবকরাও অনুপ্রাণিত হবে ড্রাগন চাষে।

সরাইল উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মাইনুল হাসান বলেন, ড্রাগন ফল এক সময় পাহাড়ি এলাকাগুলোতে চাষ হলেও বর্তমানে সমতল ভূমিতেই এর চাষ হচ্ছে। অর্কিড প্রজাতির এ ফলটি অধিক কষ্ট সহিষ্ণু ও লাভজনক হওয়ায় চাষিদের মধ্যে এ ফল চাষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বুড্ডা এলাকায় সুমন ও শফিকুল যে বাগানটি করেছেন, তা পরিচর্যায় কৃষিবিভাগ সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছে। কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর থেকে ঋণ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা শুধু পরামর্শ বিষয়ক সেবা দিয়ে থাকি।

রিলেটেড আর্টিকেল

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ

রিসেন্ট কমেন্টস